এসব নিষেধাজ্ঞায় বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় কতটা প্রভাব পড়বে, সেই প্রশ্ন এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। রশিয়ার তেল-গ্যাস ছাড়া কীভাবে চলবে বিশ্ব? এর বিকল্প পথ আছে কি না? এমন সব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনসাধারণের মাথায়।
জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম ইতোমধ্যে অনেকটা বেড়েছে। এখন রাশিয়া যদি সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা দেয়, তাতে আরেক দফা দাম বাড়বে। বিষয়টা শুধু জ্বালানির দামে সীমাবদ্ধ থাকবে না। বিশ্বজুড়ে ভোগ্যপণ্যের দরে সেই ধাক্কা লাগবে, প্রভাব পড়বে মানুষের জীবন মানে।
এ বিষয়ে রাশিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক হুঁশিয়ার করেছেন, রুশ তেলের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ বিশ্ববাজারের জন্য একটি বিপর্যয় ডেকে আনবে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের পরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়া। প্রতিদিন প্রায় ৫ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করে দেশটি, যার অর্ধেকের বেশি যায় ইউরোপে। তবে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেলের ওপর কম নির্ভরশীল। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি তেলের ৩ শতাংশ এসেছে রাশিয়া থেকে।
তেলের বিকল্প উৎস কী হতে পারে এ বিষয়ে বিবিসি জানিয়েছে, গ্যাস সরবরাহের পাইপলাইন খুব বেশি নেই। ফলে গ্যাসের চেয়ে তেলের বিকল্প উৎস খুঁজে পাওয়া সহজ হওয়া উচিত বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বেন ম্যাকউইলিয়ামস।
তিনি বলছেন, রাশিয়া থেকে বেশ ভালো পরিমাণে তেল আসে ঠিক, তবে অন্য উৎস থেকেও প্রচুর চালান পাওয়া সম্ভব।
আন্তর্জাতিকভাবে অপরিশোধিত তেলের প্রায় ৬০ শতাংশের যোগান আসে ওপেক থেকে। ফলে তেলের দামের ক্ষেত্রে ওপেকের বড় ভূমিকা রয়েছে। ওপেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরব বৃহত্তম তেল উৎপাদক দেশ। বর্তমান পরিস্থিতিতে সৌদি আরবকে তেল উৎপাদন বাড়াতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তেলের দাম কমানোর জন্য উৎপাদন বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র এর আগে যে অনুরোধ করেছিল তা প্রত্যাখ্যান করেছে সৌদি আরব।
রাশিয়া ওপেকভুক্ত না হলেও উৎপাদকদের আয় নিয়ন্ত্রণে তেলের উৎপাদন সীমিতকরণে ২০১৭ সাল থেকে ওপেকের সঙ্গে কাজ করছে।
ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিলের কথাও ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ ভেনেজুয়েলা এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান তেল সরবরাহকারী ছিল। কিন্তু এখন ভেনেজুয়েলার তেল সবচেয়ে বেশি যায় চীনে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমদানি করা প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রায় ৪০ শতাংশ দেয় রাশিয়া। পাইপ লাইনে সরবরাহ বন্ধ হলে ইতালি এবং জার্মানি সবচেয়ে বেশি ভুগবে। এ অবস্থায় কাতার, আলজেরিয়া ও নাইজেরিয়ার মতো গ্যাস রপ্তানিকারকদের কাছে যেতে পারে ইউরোপ, তবে দ্রুত উৎপাদন বাড়ানো এসব দেশের পক্ষে কঠিন।
এদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বেন ম্যাকউইলিয়ামস বলেন, ইউরোপের জন্য রাশিয়ার গ্যাসের বিকল্প পাওয়া কঠিন, কারণ বড় বড় যে পাইপ এখন ইউরোপে গ্যাস দিচ্ছে, সেগুলো রাশিয়া থেকেই এসেছে।
জ্বালানি বিষয়ক ইউরোপীয় গবেষণা সংস্থা ব্রুগেল বলছে, রাশিয়া যদি পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলে ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়াতে পারে। পাশাপাশি জ্বালানির অন্যান্য উৎসগুলো থেকেও উৎপাদন বাড়াতে পারে। তবে খুব অল্প সময়ে এর কোনোটাই করা সম্ভব না।
এছাড়াও ২০৩০ সালের মধ্যে রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ইউরোপের নির্ভরতা কমিয়ে আনার একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছে ইইউ। এই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহে বৈচিত্র্য আনা এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের বিকল্প কিছুর ব্যবস্থা করা।
বিবিসি আরও জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যে পেট্রোল ও ডিজেলের দামও বেড়েছে। যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে এক লিটার পেট্রোল ১৭৫ পেনি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৮ সালের পর পেট্রোলের দাম এখন সর্বোচ্চ। আমেরিকান অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন বলছে, গত এক সপ্তাহে পাম্পগুলোতে পেট্রোলের দাম ১১ শতাংশ বেড়েছে।
Leave a Reply