জানা যায়, লোভনীয় প্রস্তাবে কোটিপতি হবার সুযোগ পায় ঠাকুরগাঁও সদরের মন্দিরপাড়া এলাকার মজিবর ও তার দরিদ্র পরিবার। প্রস্তাব পেয়ে অনেকটা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় পরিবারটি।
প্রস্তাব অনুযায়ী লাল কাপড়ে মোড়ানো সোনালী রঙ এর একটি দেবী মূর্তিও পেয়ে যায় পরিবারের কর্তা মজিবর রহমান (৫৫)। এবার শর্তে থাকা তিনটি দুম্বা কুরবানি করার পালা। কারণ শর্ত পূরণের আগে লাল কাপড়ে মোড়ানো মূর্তিটি খোলা যাবেনা। এমনকি এই ঘটনা কাউকে বলাও যাবেনা। নিয়মের বিপরীত হলেই ক্ষতি হতে পারে।
শর্তের তিনটি দুম্বার মূল্য ও যাবতীয় খরচসহ ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেয় আসমানি জ্বিন নিজেই। কিন্তু দিনমজুর সন্তান ও চা দোকানদার পিতার সারা জীবনের সঞ্চয় মিলেও নির্ধারিত পরিমাণ মিলছেনা। তাই বাকি টাকা লোন নিয়ে শর্ত পূরণ করে পরিবারটি।
জ্বিনের বাদশার দেয়া দেবী মূর্তি
এখন তাহলে কাপড় খুলে মূর্তিটি খোলার পালা। কিন্তু তার আগেই ফোন করে বসেন আসমানি জ্বিন। দিয়ে দেন আরও একটি শর্ত। নতুন শর্ত অনুযায়ী পরিবারের চার সদস্যের নামে বিভিন্ন টেলিকমের একটি করে মোবাইল সিম কিনে দিতে হবে। সেই অনুযায়ী নিজেদের জাতিয় পরিচয়পত্র দিয়ে সিম কিনে রংপুর গিয়ে সিমগুলো পৌঁছেদেন পরিবারের কর্তা।
ঘটনাটি ২০২০ সালের দিকের ঠাকুরগাঁও শহরের মন্দির পাড়া এলাকার চায়ের দোকানদার মজিবরের। লোভের বশবর্তী হয়ে নিজের জীবনে এত বড় ভুলের কথা প্রায় দুই বছর পর প্রকাশ করেন তিনি।
মজিবর রহমান বলেন, আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। তবে এই ঘটনায় আমার বড় ছেলে বাদে বাকি চারজনই জড়িয়ে পড়েছিলাম। প্রথমে আমার ছেলের বউ রুমা আক্তারকে ফোন দেয় এক বৃদ্ধ কন্ঠের লোক। নিজেকে দাবি করেন আসমানি জ্বিন হিসেবে। পরে আস্তে আস্তে এই চক্রে আমরা পরিবারের বাকি চারজন জড়িয়ে পরি। আমাদের শপথ করানো হয় বিষয়টি যেন কারো সাথে শেয়ার না করি।
মজিবর বলন, পরিবার নিয়ে আমি একটি ভাড়া বাসায় থাকি। কিছু কিছু করে একলাখ টাকা জমিয়েছিলাম নিজস্ব একটি বাড়ির জায়গা কিনার আশায়। জমানো টাকার সাথে লোন করে আরও ৮৫ হাজার টাকাসহ আমি প্রতারকের হাতে তুলে দেই। কিন্তু পরে জানতে পারি আমাকে দেয়া দেবী মূর্তিটি সোনার নয়, পিতলের ছিলো। আমি সর্বশান্ত হয়ে গেলাম।
দিনমজুর মজিবর
এখানেই নিস্তার হয়নি ভুক্তভোগী মজিবরের। তার থেকে নেয়া চারটি সিম ব্যবহার করে অন্যত্র প্রতারণার কাজ চালিয়ে যায় সেই প্রতারক। পরে সেই সিমের নামে মামলা হলে, মজিবরের দরজায় আবার বিপদ এসে কড়া নাড়ে।
সবশেষে সোমবার ঢাকার সিআইডি ইউনিট থেকে জিঙ্গাসাবাদের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে তলব করা হয় মজিবরসহ বাকি তিনজনকে।
মুঠোফোনে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সিআইডি কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক সিরাজ উদ্দিন জানান, এই ঘটনার সাথে পরিবারটি জড়িত। মামলার তদন্ত স্বার্থে তাদের থেকে পাওয়া তথ্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে মজিবরের পরিবারকে ডাকা হয়েছে।
Leave a Reply